পরশ্রীকাতর!
নিজ দেশ ছেড়ে পরবাসী হয়েছি প্রায় ১০ বছর আগে। নিজের চেনা পরিবেশ,চেনা মানুষ ছেড়ে আচমকা এসে পড়ি এক অচেনা সম্রাজ্যে। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মানুষ;ভিন্ন তাদের আচরণ,কথা বলার ধরণ এমনকি সম্বোধন'ও ভিন্ন হয়। ছোটবেলায় একটি প্রবাদ শুনতাম "এক দেশের বুলি অন্য দেশে গালী"। সময়ের সাথে সাথে মানিয়ে নিতে শিখতে হয় এই অচেনা,ভিন্ন ধরনের মানুষগুলোর সাথে। অনেক মানুষের সাথে চলাফেরা করার কারণে তাদের বিভিন্ন আচরণ এবং তার পেছনের কারণ সম্পর্কে আঁচ করতে পারি সহজে। একটা খুব কমন বিষয় দেখতে পাই সব মানুষের মধ্যে। যে যত বেশি যোগ্য সে তত বেশি বিনয়ী।
যার যোগ্যতা নেই হয় সে অহংকারী নয়তো পরশ্রীকাতর। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষের সংখ্যাটা প্রচুর। আমি মানুষকে অনেক বড় কিছু অর্জন করতে দেখেছি যদিও সে যোগ্য ছিল না। এই মানুষগুলো হয় অন্যের বদনাম করে কিংবা সহজ বাংলায় যাকে বলে তেল মেরে নিজেদের জায়গা বানিয়ে নেয়। প্রবাস জীবনের শুরুতে এমনই এক সুপারভাইজার এর অধীনে কাজ করতে হয়েছিল আমাকে।
নতুন অবস্থায় যে কারো কোন কাজের সাথে মানিয়ে নিতে কিছুটা সমস্যা হবে এটাই স্বাভাবিক। আর এই সমস্যাগুলোই ঐ সুপারভাইজরের সাফল্যের চাবিকাঠি হয়ে ওঠে। বসের কাছে সত্য মিথ্যা বানিয়ে নালিশ করাটা তার নিত্যদিনের কাজ ছিল। যখন আমার কাজ সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা হয় তখন বুঝতে পারে যে সে কাজ খুব একটা ভালো বোঝে না। আর এই বিষয়টা চাপা দেয়ার জন্যেই বসের কাছে বিভিন্ন জনের নামে নালিশ করে তাকে টিকে থাকতে হয়।
সময়ের পরিবর্তনের সাথে একটা সময় তার জায়গাটা আমি অর্জন করি। আমার অধীনে এ পর্যন্ত প্রায় হাজারখানেক লোক কাজ করেছে। দু একবার ব্যতীত কখনো কারো নামে নালিশ করিনি। কোন সমস্যা থাকলে চেষ্টা করেছি তাকে বুঝিয়ে সমাধান করতে। নমনীয় হওয়ার চেষ্টা করেছি কেননা একটা সময় তার জায়গায় আমিও ছিলাম। আমি একটা দর্শনে বিশ্বাসী, "আজ আমি যেখানে বিদ্যমান কাল সেখানে অন্য কেউ আসবে। কারণ প্রকৃতি চক্র ক্রমসিদ্ধ"।
নিজের প্রাধান্য বিস্তার করার জন্য অথর্ব মানুষদের প্রধান কাজই হলো অন্যকে হেয় করে, ফাপরে চলা, নিজ অবস্থানের তোয়াক্কা না করে অধিক অহংবোধ নিয়ে ভাব মারা।
বাস্তবিক এদের পায়ের নিচে চোরাবালি ছাড়া মাটি নেই।মূলতঃ এরা এই চোরাবালি থেকে নিজ অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই উপরোক্ত কাজগুলো ধারাবাহিক ভাবে করতে থাকে। এজাতীয় মানুষ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখাটা বাঞ্ছনীয়। কৌশল অবলম্বন করে এদেরকে এড়িয়ে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ এসব মানুষ থেকে ক্ষতির আশঙ্কাটা প্রায় শতভাগ।
এমন কেউ যদি নিজের বন্ধুও হয় তবুও বিষয়টা সমানভাবে প্রযোজ্য। পরশ্রীকাতর-অযোগ্য অহংকারবোধ সম্পন্ন মানুষদের সাথে বসে থাকা স্বীয় ব্যক্তিত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ। সঙ্গ পরিত্যাগ বাঞ্ছনীয় তখন।
শাকিল হাসান, সিঙ্গাপুর প্রবাসী।