অবিরাম ধৈর্য্য
Author -
হৃদয়ে বাংলা
August 03, 2022
অবিরাম ধৈর্য্য
সুমাইয়া আক্তার মিতু
ফাইয়াজ ও রাইয়ান দুই বন্ধু। ছোট বেলা থেকেই শৈশব ও বেড়ে ওঠা একই সাথে।এমনকি তাদের স্কুল কলেজ ও কাকতালীয় ভাবে কর্মক্ষেএ ও একি জায়গায়। সব কিছুতেই তাদের মাঝে মিল খুঁজে পাওয়া গেলেও, যে অমিলটি তাদের মাঝে লক্ষনীয় ভাবে দেখা যায় তা হলো তাদের আচরণগত বৈশিষ্ট্য।
ফাইয়াজ নমনীয়, এবং বিচক্ষণ একজন মানুষ অপরদিকে রাইয়ান বদমেজাজী ও রাগী স্বভাবের।
তাদের কর্মক্ষেএ যেহেতু একই জায়গায় নিতান্তই তাদের ওঠাবসা একই সাথে। ফাইয়াজ প্রতিদিনের মতো ভোরে ঘুম থেকে উঠে তার রবের সন্তুষ্টির জন্য ফজরের সালাত আদায় করে তার সারাদিনের কার্যক্রম শুরু করে। সকালে ফজরের সালাতের পর তার প্রতিদিনের রুটিন হলো ৩০ মিনিটের মতো হাঁটাচলা করা এবং সকালের মনোমুগ্ধকর আবহাওয়া উপভোগ করা। প্রতিদিনের মতো ফজরের সালাত শেষে রুটিন মাফিক বের হয়েছেন হাঁটার জন্য, সে হাঁটছে আর উপভোগ করছে কি অপরুপ মহান রবের সৃষ্টি। যিনি তার বান্দার জন্য প্রতিনিয়ত হাজার লক্ষ কোটি নিয়ামত প্রেরণ করছেন। এই যে সতেজ বায়ু যা দ্বারা প্রতিদিন ফ্রীতে শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন নিয়ে থাকি। অপরদিকে এ অক্সিজেন হাসপাতালে থাকা রোগীদের চড়া মূল্য দিয়ে কিনতে হয়। আমরা মনুষ্যকূল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার এতো সব নিয়ামতের জন্য একবারও কি প্রাণ খুলে শুকরিয়া সরূপ আলহামদুলিল্লাহ বলি? বলি না। এসব ভাবতে ভাবতে ফাইয়াজ তার হাঁটা শেষ করে বাসায় পৌঁছালেন। এবার আসা যাক রাইয়ানের কথায় তার প্রতিদিনের রুটিন হলো রাত তিনটে চারটে পর্যন্ত নেট দুনিয়ার সাথে যুক্ত থাকা এবং শেষ রাতে ঘুমোতে যাওয়া। যার ফলস্বরূপ সকালে ১০/১১ টায় ঘুম থেকে ওঠা এবং দেরি করে অফিসে যাওয়া। সে ফাইয়াজের মতো সকালের সতেজ নির্মল বায়ু উপভোগ করতে পারে না। প্রতিদিনের মতো তারা দুই বন্ধু অফিসে এসে তাদের কাজ করছে, হঠাৎ তাদেরকে ডাকা হলো উর্ধতন কর্মকর্তার রুমে এবং বলা হলো, রাইয়ানের প্রমোশন হয়েছে সে এ মাস থেকে তার বেতনের দিগুণ বেতন পাবে। যদিও অফিসে রাইয়ানের চেয়ে ফাইয়াজ সব দিক দিয়েই এগিয়ে, কাজের ক্ষেএেও ফাইয়াজ খুবই দায়িত্বশীল ও মনোযোগী।তবুও অফিসের উর্ধতন কর্মকর্তা কেন যে, ফাইয়াজের প্রমোশন না করে রাইয়ানের করলেন তা বরং তিনিই ভালো বলতে পারবেন। আবার এখন ফাইয়াজ আর্থিকভাবে বেশ টানাপোড়েনের মাঝে আছে তাই প্রমোশনটি ফাইয়াজের খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। হঠাৎ রাইয়ান ফাইয়াজকে বলল আচ্ছা বন্ধু, তুমি যে এই প্রমোশনটি পেলে না অথচ এটি পাওয়ার একমাএ যোগ্য তুমিই ছিলে এবং এই সময়ে এটি তোমার আর্ধিক সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন ছিল। এর জন্য কি তোমার মনোক্ষুণ্ণ হয়নি?
তখন ফাইয়াজ বলল যেকোনো পরিস্থিতি প্রত্যেক মানুষের উচিত সবর বা ধৈর্য্য ধারণ করা।
আমার রব আমাকে যেভাবে রেখেছেন সব কিছুর জন্যই আলহামদুলিল্লাহ। কুরআনের আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেছেন,
" ধৈর্য্যশীলদেরকে তো অপরিমিত পুরুষ্কার দেয়া হবে।"
(সূরা যুমার। আয়াত ১০)
# আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "আল্লাহ যার মঙ্গল চান,তাকে দুঃখ- কষ্টে ফেলেন।"
(সহীহুল বুখারী ৫৬৪৫, আহমাদ ৭১৯৪,মুওয়াত্তা মালেক ১৭৫২)
ফাইয়াজের দিনগুলো কষ্টের মাঝে কাটতে লাগল। কিন্তু তবুও ফাইয়াজ তার রবের ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট। অপরদিকে রাইয়ান তার এতো এতো টাকা ও সম্পদ থাকার পরও সে সন্তুষ্ট নয়, তার আরও চাই।
একদিন রাইয়ান একটি কাজের জন্য অফিসের এক কর্মীর থেকে ঘুষ নিয়েছিল যার ফলস্বরূপ তার উচ্চ পদ হারাতে হয় এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
তখন অফিসের উর্ধতন কর্মকর্তা নিজের ভুল বুঝতে পারে এবং ফাইয়াজকে রাইয়ানের থেকেও উচ্চ পদে বসানো হয়। তখন ফাইয়াজ বলল নিশ্চয়ই আমার রব আমাকে নিরাশ করেনি "আলহামদুলিল্লাহ।"
~সমাপ্ত~