সমাজ সেবক ডাকাত _ সোহরাব হোসেনের লেখা ছোট গল্প

0

সমাজ সেবক ডাকাত।

তখন বর্ষাকাল চারিদিকে বন্যার পানিতে নড়বড় অবস্থা গ্রামের প্রায় সব কৃষকের ফসলী জমির আধাপাকা ধান বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। খেটে খাওয়া মানুষেরা চরম অভাবের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
অভাবের তাড়নায় গ্রামাঞ্চলের লোকজন ধরতে গেলে মরণাপন্ন অবস্থা, সর্বপরি দেখে মনে হচ্ছে তারা অভাবের সাথে একরকম যুদ্ধ করছে।
রসুলপুর গ্রামে ধনী গরীব বহুঘর লোকের বসবাস, তেমনিভাবে গ্রামের একপাশে চৌধুরী পাড়া। আর অপরপ্রান্তে সাধারণ মানুষের বাস। চৌধুরী পাড়ায় রহমান চৌধুরী হলো বিরাট বড় ধনী লোক এক কথায় অঢেল টাকা পয়সার মালিক।
চৌধুরী সাহেবের পরিবারে সদস্য সংখ্যা তিনজন রহমান সাহেব, তার স্ত্রী ও আদরের একমাত্র কন্যা অপরুপ সুন্দরী অর্নাস পাশ করা কেয়া চৌধুরী।
অন্যদিকে সাধারণ মানুষের মত বাস করে জমির মোল্লা সাত আটজন সদস্যের পরিবার নিয়ে জমির মোল্লার সংসার চলছে মোমবাতির মত টিপটিপ করে। জমির মোল্লার বড় ছেলে - জসিম মোল্লা মার্স্টাস পাশ করা একজন শিক্ষিত ভদ্র নম্রস্বভাবের মানুষ।
চাকুরী না-পেয়ে সমাজে ও জমির মোল্লার সংসারে সে আজ একেবারেই বেকার। বেকারত্ব জীবন জসিমের বয়ে বেড়ানো বড়ই দুঃখের ও যন্ত্রণাদায়ক হয়ে পড়েছে।
জসিম বহুত চেষ্টা ও খোঁজাখুজির পর অবশেষে বেচে নিল সবচেয়ে জগন্যতম কাজ ডাকাতি পেশা, গড়ে উঠলো সমাজের বুকে এক দূধর্ষ ডাকাত হিসেবে, প্রায় ডাকাতি করেই চলে তার জীবন।
যদিও জসিম একজন শিক্ষিত ছেলে তাই তার হৃদয়ে অন্যায়কে মেনে নেওয়া বড়ই কষ্টের হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিল ডাকাতির বেশির অংশ সে গরীব দুঃখী জনগনের মাঝে বিতরণ করার জন্য যেন আল্লাহ একটু হলেও তার প্রতি খুশি থাকে।
কৃষি কাজে জমির মোল্লার সংসার ভালো চলে না তাই জসিম তার বাবাকেও কিছু সহায়তা প্রদান করে। এভাবেই আজ এক বাড়ীত কাল অন্য গ্রামে অস্ত্র হাতে মুখোশ পড়ে হামলা করে ব্যাপক সাহসের সাথে ঝাপিয়ে পড়ে জসীম।
ডাকাত জসীম একদিন বিকাল বেলা পাড়ার এতিম খানার নিকট দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল হঠাৎ শুনতে পেলো অনেক গুলো শিশু বাচ্চাদের কান্নার আওয়াজ, দ্রুত এতিমখানার ভেতর ঢুকে পড়ল এবং দেখল খাবারের অভাবে এতিম শিশুরা কতই কষ্ট করছে। জসীমের চোখ থেকে অনবরত গড়ছে অশ্রুধারা।
শিশুদের মাথায় হাত বুলিয়ে বেরিয়ে আসল ডাকাত জসীম এবং মহাচিন্তায় সিদ্ধান্ত নিল আজ যেভাবেই হোক পাড়ার রহমান চৌধুরীর চালের গুদামঘরে ডাকাতি করবো। তারপরেই রাত ১২টায় জসীম কয়েক জন সাঙ্গ পাঙ্গ নিয় অত্যান্ত কৌশলে চৌধুরী সাহেবের গুদাম হতে ২০০ বস্তা চাল ডাকাতি করে এতিম খানায় নিয়ে গেল এবং সাথে কিছু নগদ টাকা সহ এতিম খানায় দান করল।
অসহায় গরীব দুঃখী জনগনের পাশে দাড়ানো জসীমের প্রায় নেশা হয়ে গেছে। জসীমের ডাকাতি করার উদ্দেশ্য হলো যারা এই সমাজে কখনো গরীব দুঃখী কে সাহায্য করে না তাদের অবৈধ সম্পদের প্রতি তার চরম রাগ ও জেদ।
এতসব ডাকাতির পরেও জসীম আল্লাহ কে বলে হে- আল্লাহ আমি তাদের ঘরে ডাকাতি করেছি, যারা অসহায়কে সহায়তা করে না, যদিও এ কাজে খুব পাপ তবুও বলি হে মাবুদ আমি যেভাবেই হোক গরীব দুঃখী অসহায় এতিমদের বেচেঁ রাখতে সাহায্য করছি। তার অছিলায় তুমি আমাকে ক্ষমা করিও।
অবশেষে রহমান চৌধুরী জানতে পারলো তার গুদাম ডাকাতি হয়েছে কিন্তু কোন অবস্থাতেই ডাকাত জসীম কে ধরতে বা সনাক্ত করতে পারল না।
তাই সে অনেক চিন্তার পরে সঠিক সিদ্ধান্ত নিল যে আমি আর কয়দিন বেঁচে থাকবো তাই আদরের কন্যাকে ভালো একজন নিস্বার্থবান পাত্রর সাথে বিয়ে দিয়ে সংসার ও চৌধুরী মঞ্জিলের দায়িত্ব অর্পন করবো।
মাইকে ঘোষণা করা হলো সন্ধান চাই---------------- যে ব্যক্তি সমাজে পরোপকারী নিঃস্বার্থ বান ও গরীব দুঃখী জনগনের পাশে দাড়াতে সক্ষম। সাতদিন গত হয়ে গেল কিন্তু কোনভাবেই এরকম কাউকে পেল না।
অবশেষে জসীম নিজেই চৌধুরী সাহেবের বাড়ী গেল এবং ভরা মজলিসে নিজেকে নিঃস্বার্থবান পরোপকারী অসহায় গরীব দুঃখী জনগনের বিপদের সাথী প্রমান দিল ও সব কর্মের ইতিহাস খুলে বলিল। রহমান চৌধুরী সব কথার যতেষ্ট প্রমান পেয়ে খুশি হয়ে তার সাথে আদরের কন্যাকে বিবাহ দিল। এবং জসীম ডাকাত প্রসংশার সহিত নতুন সংসার জীবনে ঈমানের সহিত চলতে শুরু করলো। তার পেক্ষাপটে জসীম --
সমাজ সেবক হিসেবে পরিচিতি লাভ করল।।
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
সোহরাব হোসেন
(সহঃ শিক্ষক)
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সারিয়াকান্দি, বগুড়া।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)