হঠাৎ দেখা

0



হঠাৎ দেখা

একসাথে বগুড়া থেকে খাগড়াছড়ি গিয়েছি। আমাকে দিঘীনালা ৩৩ ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের নামিয়ে দিয়ে তিনি গেলেন তার থানার দিকে। তিনি খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা থানায় কর্মরত। বলছিলাম আমাদের এলাকার এক বড় ভাই এস আই নজরুল ইসলামের কথা। তারপর আর দেখা হয়নি। খাগড়াছড়িতে মাঝেমধ্যেই কোন কারণ ছাড়াই শান্তিবাহিনী এবং সরকারের বাহিনীদের মধ্যে বিবাদ লেগে যায়। মাঝেমধ্যে ওরা নিজেরাও নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে বিবাদে লিপ্ত হয়। আমি খাগড়াছড়ি থাকা অবস্থায় হঠাৎ একদিন এরকম একটা বিপত্তি ঘটে। তাই স্থানীয় শান্তিবাহিনী (সন্তু লারমার সমর্থক) অনির্দিষ্ট কালের জন্য হরতালের ডাক দিয়েছে।

আমি পরলাম মহা বিপদে। বেড়ানোর জন্য গিয়ে এটা কেমন কাজ হলো তাই ভেবে খারাপ লাগছে। যাইহোক প্রথমদিন শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন হল দ্বিতীয় দিন আবার হরতাল শুরু হলো আমি ভাবলাম এভাবে বসে থাকলে তো আর ঘোরাঘুরি করা হবে না। বাসাওলার এক নাতি ওর নাম রবি সে অটো চালায়। তাকে বললাম ভাই হরতালতো শান্তিপূর্ণভাবেই হচ্ছে চলেন না ঘুরে আসি। তিনি বললেন, হরতাল চলাকালীন অবস্থায় গাড়ি বের করলে গাড়ি ভাঙচুর করতে পারে। আমি বললাম গতকালকেও কিন্তু হরতাল হয়েছে তবে কোথাও কোন ভাঙচুর, মারামারি কিচ্ছু হয়নি আজকেও হবে না চলেন। সাহস করে তিনি বললেন ঠিক, আছে চলেন আপনি যখন বলছেন ঘুরে আসি। আমি বললাম আপনাদের খাগড়াছড়ির আশেপাশে কোথাও ঘোরার মত জায়গা আছে? তিনি বললেন বেশ কয়েকটা আছে কিন্তু আমি আপনাকে দূরে কোথাও নিয়ে যেতে পারবো না তবে দুই কিলোমিটারের মধ্যে একটা আছে সেখানে যেতে পারবো। আমি বললাম ঠিক আছে তাহলে ওখানেই চলেন। তিনি বললেন ওটা কিন্তু পার্ক বা রিসোর্ট না ওটা একটা বাগান, বিশাল বাগান। আমি বললাম ঠিক আছে সেখানেই নিয়ে চলুন।

খাগড়াছড়ির রাস্তাগুলো খুব সুন্দর পাহাড় কেটে উঁচু করে নিয়ে গেছে আবার নিচে নেমে গেছে আবার ডানদিকে বামদিকে সাপের মতো বাকা করে নিয়ে গেছে দেখতে বেশ সুন্দর লাগে আমরা সেই বাগানের দিকে রওনা হলাম বাগানে গিয়ে অনেক ঘোরাঘুরি করলাম। বিশাল বাগান হরেক রকমের গাছ দিয়ে ভরপুর। অসময়ে বরই গাছে অনেক বরই দেখতে পেলাম। যে সময় স্বাভাবিকভাবে বরই গাছে ফুল ধরে সেই সময়ে ওই বাগানের বরই খাওয়ার উপক্রম। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম বরই বিক্রয় শুরু করেছে বাগান কতৃপক্ষ। যাইহোক আমরা মাত্র দুজন মানুষ তাই হাফ কেজি বরই ৮০ টাকা দিয়ে কিনে নিলাম। আটোওয়ালা 4/5 টা খেলো আমি 4/5 টা খেয়ে আরেকটু ঘুরে আবার বাসার দিকে রওনা দিলাম। এক কিলোমিটার আসার পর ওখানে তিন মাথার মোড়ে বেশ কজন পুলিশ দেখতে পেলাম। সেখানে কিছু পুলিশ দাঁড়িয়ে এবং কিছু সংখ্যক বসে হরতালের ডিউটি করছে। আমাদের গাড়িটা দেখে একজন পুলিশ দাঁড়িয়ে হাত তুলে অটোআলা কে থামতে ইশারা করলেন। অটোআলা ভয়ে আরো জোরে চালালেন এবং আমায় বললেন আপনার জন্য বোধহয় আমার গাড়িটা আজ থানায় যায়।

আমি গাড়ির ভেতর থেকে পিছনে উঁকি দিতেই দেখি আমার এলাকার সেই বড় ভাই এএসআই নজরুল ইসলাম এগিয়ে আসছেন। আমি অটোআলাকে বললাম ভাই অটো থামান কোন ভয় নেই পুলিশ আমার পরিচিত। অটোআলা অটো থামালেন। তারপর নজরুল ভাই এগিয়ে এসে অটোআলাকে বললো থামার জন্য ইশারা করার পরেও থামালেন না কেন? আমরা তো আর আপনাদের কোন ক্ষতি করব না বরং আমরা আপনাদের উপকারের জন্যই বসে আছি। যাই হোক তার সাথে দেখা হয়ে অনেক ভালো লাগলো। তিনি আমার হাত ধরে টেনে সবগুলো পুলিশের কাছে নিয়ে গেল এবং সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল এটা আমার গ্রামের ছোট ভাই কদিন আগে একসাথেই খাগড়াছড়ি এসেছি। আমাকে দেখে ডিউটিরত অবস্থায় সবাই খুশী হলো সবার সাথে হাই-হ্যালো করে বাসায় ফেরার সময় নজরুল ভাই আমাকে বললেন, সত্যিই তোমাকে দেখে আমার খুব ভালো লাগতেছে। নিজের এলাকার মানুষ এখানে এভাবে দেখতে পাব আমি তো কল্পনাও করিনি। সত্যিই তাই, আমিও কল্পনা করিনি এভাবে তার সাথে দেখা হবে। আসলেও দূরে কোথাও গেলে নিজের এলাকার মানুষের সাথে দেখা হলে খুব ভালো লাগে।

তারপর আমার হাতের বরইগুলো নজরুল ভাইকে দিয়ে বললাম সবাই মিলে খান আমরা মাত্র দুইজন মানুষ তাই কম করে কিনেছিলাম। নজরুল ভাই বললেন বাসায় নিয়ে যাও আমি বললাম না ভাই এইটুকুর আর কি বাসায় নিবো তারচেয়ে আপনারা সবাই একটা দুটো করে খেয়ে নিন। তিনি বললেন ঠিক আছে, তারপর বললেন আমি দীঘিনালা থানায় থাকি তোমার যদি সময় থাকে অবশ্যই দীঘিনালা থানায় আসবে। তারপর তিনি আমাকে তার ফোন নাম্বার দিলেন এবং অবশ্যই থানায় যাওয়ার জন্য বললেন। আমিও সম্মতিসূচক জবাব দিয়ে তার কাছে থেকে বিদায় নিলাম।

 

Md Shoikot

মোঃ সৈকত আহম্মেদ।

পার্বত্য জেলা ভ্রমণ কাহিনী থেকে নেওয়া।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)