চৈতালী _ কিশোর পণ্ডিত

0


চৈতালী

.........….....

কিশোর পণ্ডিত

বিনয় কুমারের বিবাহে বর যাত্রীর সহিত তাহার পাড়ার ছেলে শুভ্র আসিয়াছিল। বিবাহের পর বর-কনে যে ঘরে ঢুকিবে সে ঘরে কি একটা হুলুস্থুল বাঁধিয়া গেল। মেয়েলি কন্ঠের আওয়াজ শুভ্রের কর্ণে আসিয়া বারম্বার আঘাত করিল।দুইশতর নিচে দরজা খুলিব না। বাবুরা টাকার অংক কষাকষি করিতেছেন। আপন বাড়ির কোন এক বয়স্কা ধমকাইয়া দরজা খুলিতে আদেশ করিলেন।

কিন্তু কোনোটাতেই ফল হইতেছেনা। মেয়েদের দুইশত টাকাটাই আগে চাই পরে দরজা খুলিবে। শেষে ঘটনাটা যখন উত্তেজনায় পৌঁছাইতে লাগিল তখন শহুরে পড়ুয়া শুভ্র বিনয় বাবুর কর্ণে গোপনে কি যেন বলিয়া দুইশত টাকা চাহিয়া লইল ঘরের ভিতরে মেয়েদের মধ্যে টাকাটা হাতে কে লইবে এই বাদানুবাদের পর সবাই চৈতালীকেই লইতে বলিল। চৈতালী বিনয় কুমারের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী শ্রাবণী রানী তালুকদারের ছোট বোন সে হাত বাড়াইয়া টাকা চাহিল। শুভ্র টাকাটা লইয়া তাহার হাতে দিবার জন্য সম্মুখে অগ্রসর হইল ।গ্রাম্য হেজাকের চকচকে আলোয় দুইজনের দুই জোড়া আঁখি এবং চার জোড়া আঁখিপল্লব একত্রিত হইল। শুভ্র চৈতালীর হাতে টাকা প্রদান করিয়া হাত তুলিয়া লইল ঠিকই কিন্তু চোখ উঠিল না। সে দেখিল তাহার আপন আঁখিতে মেয়েটিরও হরিণী নয়ন যোগল স্থির হইয়া রহিয়াছে।

কিয়ৎক্ষণ পর শুভ্রের বন্ধুরা তাহার পিঠে সজোরে আঘাত করিয়া চৈতন্য করাইয়া দিতেই সে পিছন ফিরিয়া তাকাইয়া দেখিল সবাই তাহার পিছনে দাঁড়াইয়া রহিয়াছে। লজ্জায় সে উক্ত স্থান ত্যাগ করিল। পরে দুই বন্ধুতে পূর্বের ঘটনা পুনরাবৃত্তি করিয়া হাসিতে আরম্ভ করিল ।পরদিন কনে বর লইয়া শুভ্ররা আপন বাড়িতে ফিরিল।

কিছুদিন পর গ্রীষ্মের ছুটিতে শুভ্র বাড়িতে আসিয়াছিল। ছুটি বেশ দীর্ঘ ছিল। শুভ্র প্রত্যুষে শয্যা ত্যাগ করিয়া লুঙ্গি এবং গামছা হাতে লইয়া বিনয় বাবুদের পুকুরের ঘাটে স্নান সারিতে অগ্রসর হইল। যখন সে পুকুরঘাটে নামিল তখন দেখিল পুকুরঘাটে এক চন্দ্রের উদয় হইয়াছে সে‌ উন্মাদ হইয়া ভাবিল আজ সকালে কি পূর্ণিমা হইতেছে নাকি? ভাবিয়া উপরে গগনে তাকাইয়া দেখিল এখন সকাল ,পূর্বে সূর্য লাল হইয়া উদিত হইতেছে ।তাহলে পুকুরে আবার কোন চন্দ্র উদিত হইল ।কিছু ভাবিয়া না পাইয়া সে পুকুরের সেই চন্দ্র নিরব দৃষ্টিতে দেখিতে লাগিল চন্দ্রবদন চৈতালী রানী তালুকদার কিছুক্ষণ তাকাইয়া লজ্জায় মাথা বিপরীত দিকে ঘুরাইল। শুভ্র দেখিল চন্দ্র ডুবিয়া গিয়াছে। সিক্ত বসনে চৈতালী কুমারী অম্বিকা রানী তালুকদারের সহিত বাড়ির দিকে অগ্রসর হইল। শুভ্র অম্বিকা নাম ধরিয়া ডাকিতেই অম্বিকা দাঁড়াইল ।অম্বিকা বিনয় কুমারের ছোট বোন। শ্রাবণীর ননদ। চৈতালী কবে আসিয়াছে শুভ্র অম্বিকাকে জিজ্ঞাসিল অম্বিকা কহিল গতকাল রাত্রে দাদার সহিত আসিয়াছে। শুভ্র অম্বিকার সহিত কথা কহিয়া দেখিল রাজকুমারী পালাইয়াছে।সে অন্দরে চলিয়া গিয়াছে।

শুভ্র স্নান সারিয়া বাড়িতে ফিরিতেছিল পথে দেখিল রাজকন্যা বহির্বাটীর তুলসী তলায় নিরবে একাকিনী বোনের পূজার জন্য তুলসী চয়ণ করিতেছে। একাকিনী পাইয়া শুভ্র কিছু বলিতে নিকটে যাইতে উদ্যত হইল হঠাৎ দেখিল অম্বিকা আসিতেছে আবার অম্বিকাকে দেখিয়া ঘুরিয়া দাঁড়াইল। রাজকন্যা লক্ষ্য করিয়াছিল রাজকুমার আপন সনে আসিতেই উদ্যত‌ হইয়াছিল আবার অম্বিকা মানবীর আভাস পাইয়া হৃদয়ে তাড়া খাইয়া পিছু হটিয়াছে। নিকটে আসিতে সুযোগ করিবার নিমিত্তে চৈতালী অম্বিকাকে তাহার দিদি পূজায় বসিয়াছে কিনা দেখিয়া আসিতে বলিল। রাজকন্যার আদেশে অম্বিকা বহির্বাটী ত্যাগ করিয়া অন্দরে গমন করিল রাজকুমার সকলি বুঝিয়া নিকটে আসিল কথা কহিল কন্যাও কথা কহিলেন।

শুভ্র শহরে লেখাপড়া করে। সে বি.. ক্লাসের ছাত্র। বাবা গরিব চাষি। নিজের সামান্য জমিজমা আছে। তাহা চাষ করিয়া বাৎসরিক খরচ চলিয়া যায় কিন্তু পুত্রের লেখাপড়ার খরচ চালাইতে ওই সম্পত্তি চাষাবাদে হয়না। তাহাই তাহার পিতা বিনয় বাবুদের কিছু জমি বর্গা চাষাবাদ করিয়া আসিতেছে।

শুভ্রের ছুটির দিন শেষ হইয়া গেল চৈতালীরও বাড়ি ফিরিবার সময় হইল। তাহাই তাহারা একদিন পরস্পর পরস্পরকে পত্র লিখিতে বলিয়া আপন আপন গোপনীয় ঠিকানা প্রদান করিয়া আপনার গন্তব্যস্থলের দিকে রওনা হইয়া গেল। এইভাবে তাহাদের সম্পর্ক দুই বৎসরকাল ব্যাপিয়া আরও গভীর হইল।

বি..পাশ করিয়া শুভ্র এম..ভর্তি হইল। এতোদিনে তাহাদের সম্পর্কের কথা সবাই জানিয়া গেল। জানাইল রুপশ্রী। রুপশ্রী জানিয়াছিল এইভাবে- একদা পূজার ছুটিতে শুভ্র বাড়ি আসিয়াছিল। পত্রে চৈতালীর সাথে কথা হ‌ইয়াছিল সেও তাহার বোনের বাড়িতে পূজার সময় বেড়াইতে আসিবে কিন্তু শুভ্র দেখিল যে সে আসে নাই ।সে বড় চিন্তিত হইল এবং শেষে মনস্থির করিল যে সে তাহাদের বাড়ি যাইবে। তাহার মনস্থির এবং বিনয় কুমার তালুকদারের ছোট ভ্রাতা তনয় কুমার তালুকদারের প্রস্তাবে শুভ্র তনয়কে লইয়া সন্ধ্যাবেলা চৈতালীদের বাড়ি উপস্থিত হইল। প্রবাসী তনয় কুমার শুভ্রের ছোটবেলার বন্ধু পরীক্ষিত বন্ধুদের মধ্যে সে একজন তাহার মত এমন বিশ্বাসী বন্ধু শুভ্রের আর দ্বিতীয়টা নাই। তনয় কুমারকে দেখিয়া তাহার তালই মশাই এবং মাওই মা খুব খুশি হইলেন। তাহাদের ভাবখানা এমন হইল যেন তাহারা হাতে স্বর্গ পাইলেন। তাহাদের উভয়কেই খুব খাতির এবং সমাদর করা হইল সমাদৃত পুরুষদ্বয় এত সমাদর পাইয়া অতীব সন্তুষ্টি প্রকাশ করিল।

সেইখানে তিনদিন অবস্থানকালে একদিন সন্ধ্যাবেলা চৈতালী শুভ্র গোপন অভিসারে মিলিত হইয়াছিল। এহেন গোপন সাক্ষাৎকালে অনেকেই অনেক কথা কহিল। প্রত্যেকেই প্রত্যেককে উদ্দেশ্য করিয়া বলিল যে একে অন্য বিহনে বাঁচিবে না শুভ্র যেন অধিক পত্র লেখে এত অল্প পত্রে চৈতালীর চলিবে না সে যেন তাহার অনুপস্থিতিকালে তাহার একটা ছবি দিয়া যায়। রুপশ্রী আড়াল হইতে সবই শুনিল কিন্তু তনয় কিছু জানিল না।

রুপশ্রী চৈতালীর কাকাতো বোন এস.এস.সি. তিনবার ফেল মারিয়া সে এখন বি.য়ে উত্তীর্ণ হইবার আশায় পাক খাইয়া বেড়াইতেছে শুভ্রকে বহুবার প্রস্তাব দিয়াছিল কিন্তু তাহাতে কোন কাজ হয় নাই। তাহারি আরাধ্য অন্যের দেবতা হইবে ইহা সে মানিয়া লইতে পারিল না বাড়ির কর্তা ভূবন তালুকদার রুপশ্রী কর্তৃক সকলি অবগত হইয়া ভীষন ক্ষেপিয়া গেলেন তিনি কন্যাকে ডাকিয়া সকল জিজ্ঞাসিলেন এবং শেষে কন্যাকে বাড়ির বাহিরে যাইতে মানা করিলেন। এমনকি শ্রাবণীদের বাড়িতে যাইতেও মানা করিয়া দিলেন।

এক পত্রে চৈতালী কাঁদিয়া কাঁদিয়া সকল কিছু শুভ্রের নিকট লিখিয়া পাঠাইল কিন্তু সেই পত্র শুভ্র না পাইয়া পাইল ভূবন তালুকদার। পত্রখানা রুপশ্রী খুব কৌশলে হস্তগত করিয়া কাকাকে উপহার দিয়াছিল।

ভূবন মহাশয় যেইদিন শুভ্রের কথা শুনিয়াছিলেন তাহাতে তিনি মনে মনে খুশিই হইয়াছিলেন।

এমন সুন্দর ছেলে এম.. অধ্যয়নরত খুবই সুন্দর সুদর্শনও বটে, কিন্তু যখন জানিলেন তাহার বাবা তাহারি জামাতার বর্গাদার তখনই ছোটলোক আখ্যায়িত করিয়া চাষার ছেলে গালি দিয়া ক্ষেপে বাঘ হইয়া গেলেন। একদিন ভূবন তালুকদার রুপশ্রীকে ডাকিয়া কহিলেন, রুপশ্রী কুলাঙ্গারটা যদি আরো কোন পত্র দেয় তাহলে তুমি সেই পত্র গুলো আমাকে যে কোনভাবেই দিবা এবং তাহাকে যদি কোনদিন এই গ্রামে দেখো তাহলে একটিবার আমাকে খবর দিও ওকে আমি পুলিশে দেবো। এই বলিয়া তালুকদার মহাশয় মেয়ের বিবাহ দিবেন সিদ্ধান্ত জানাইয়া বাহিরে চলিয়া গেলেন।

সকলই শুনিয়া রুপশ্রী একেবারে ত্থ মারিয়া গেল। সে যতটুকু চাহিয়াছিল তাহার অতিরিক্ত হইতেছে দেখিয়া তাহার হৃদয় সদয় হইল। তাহা ছাড়া তাহার মনে যে আশা ছিল তাহা তো কোনদিন পূরণ হইতেছে না এই‌ ভাবিয়া সে মনে মনে সিদ্ধান্ত লইল যে , সে যাহাকে ভালোবাসে সে তো তাহাকে ভালোবাসে না। আর যদিই সে শুভ্র কে ভালোবাসে তাহলে তাহার ভালোবাসার পাত্রকে এমন বিপদে পড়িতে দিবে কেন ? তাহলে তাহার ভালোবাসার মূল্য কোথায় রহিল। তাহাই সে সিদ্ধান্ত লইল যে সে চৈতালীকে সকলি বলিবে। তাহার নিকট হইতে ক্ষমা চাহিয়া লইবে এবং প্রয়োজনে তাহাদিগকে জীবন দিয়া উপকার করিতে সচেষ্ট হইবে ।সে চৈতালীকে সকলি বলিয়া করজোড়ে মিনতি করিল যে সে যেন তাহাকে ক্ষমা করিয়া দেয়। রুপশ্রীর এমন আকুতি শুনিয়া চৈতালীর কঠিন হৃদয় কোমল হইল। সে তাহাকে ক্ষমা করিয়া দিল।

প্রায় তিন মাস গত হইয়াছে শুভ্র একটি পত্রও অবগত হইতেছে না। চৈতালী কেমন আছে সে কিছুই জানিতেছেনা। চৈতালীর চিন্তায় তাহার পড়ালেখা ভালো যাইতেছে না তাহাই সে ঠিক করিল বাড়ি যাইবে চৈতালীদের বাড়িতেও যাইবে। যাইবে বলিয়া মনস্থির করিতেই পিয়ন আসিয়া একখানা পত্র প্রদান করিল। শুভ্র অতি দ্রুত পত্র খুলিয়া পড়িল চৈতালী লিখিয়াছে ,সে যেন আপাতত এখানে না আসে এখানে ভীষণ অসুবিধার সৃষ্টি হইয়াছে। সে আসিলে তাহার বড় বিপদ হইবে ।আর যদিই বা সে এখানে আসে তাহলে যেন সে এমন প্রস্তুতি লইয়া আসে যেন তাহাকে একেবারে আপন করিয়া লইয়া আসিতে পারিবে অবশেষে লেখা আছে ,তুমি যেন এম. . ফাইনাল দিয়াই আস আমি তোমার জন্য মরণ পর্যন্ত অপেক্ষা করিব পত্র পড়িয়া শুভ্র সকলি বুঝিল ভূবন তালুকদারের বদ মেজাজের কথা সে জানিত, পুলিশের কথাও চৈতালী লিখিয়াছে। অতএব ফাইনাল পরীক্ষার আর মাত্র ছয় মাস বাকি থাকিতে এই সময়ে অত বড় হাঙ্গামায় না গিয়া সে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়া চৈতালীর কথামতো সকল প্রস্তুতি লইয়াই যাইবে। এই সকল ভাবিয়া সে বাড়িতে না গিয়া ক্লাসের দিকে রওনা হইয়া গেল।

বিনয় কুমার তালুকদারের কনিষ্ঠ ভ্রাতা তনয় কুমার তালুকদার প্রবাসে ফিরিতে মনস্থির করিল। বিনয় তালুকদার তাহাকে একা না পাঠাইয়া যুগলবন্দী করিবার ফন্দি আঁটিলেন। তাহাই তিনি তাহার পছন্দের পাত্রীর সহিত তাহার ভাইয়ের বিবাহের কার্য সম্পাদন করিয়া নব দম্পতিকে আশীর্বাদ করিলেন নব দম্পতি পরদিন কানাডা যাইবে। রাত কাটিল ।ভোর হইল। দশটা বাজিল ।এরোপ্লেন আকাশে উড়িল। তাহারাও আকাশে উড়িল।

শুভ্র ছয় মাস পর এম.. ফাইনাল দিয়া গতরাত্রিতে বাড়ি আসিয়াছে। পরদিন সকালে ভূবন তালুকদারের বাড়িতে যাইবে। তাহাকে সকলি বলিবে চৈতালীকে তাহার নিকট ভিক্ষা চাইবে, প্রয়োজনে পায়ে ধরিবে। তালুকদার মহাশয় তাহাতেও রাজি না হইলে জোর করিয়া সে চৈতালীকে বিবাহ করিয়া সঙ্গে লইয়া আসিবে। সকল স্থির করিয়া সে পরদিন প্রত্যুষে চৈতালীদের বাড়ির দিকে রওয়ানা হইয়া গেল। ট্রেন, নৌকা এবং শেষে পায়ে হাঁটিয়া যখন সে তালুকদার বাড়ী পৌঁছাইল তখন আকাশে‌ সন্ধ্যা তারারা কিছু কিছু উঠিয়াছে গত পরশু পূর্ণিমা গিয়াছে অতএব চাঁদ উঠিতে কিছু দেরি আছে। অন্ধকারের মধ্যে কাউকে স্পষ্ট দেখা যাইতেছে না চৈতালী কোথায় আছে কে বলিবে। তালুকদার মহাশয় হয়ত গঞ্জে গেছেন ।শ্রাবণী শ্বশুরবাড়িতে সারা বাড়িটা একেবারে জনশূন্য যেন ভুতুড়ে বাড়ি। অন্ধকারের মধ্যেই কে যেন দূর থেকে মিটিমিটি প্রজ্জ্বলিত একখানা কেরোসিনের মাটির প্রদীপ লইয়া ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ধীরে ধীরে শুভ্রের নিকটে উপনীত হইল ।সে দেখিল রূপশ্রী সেও শুভ্রকে চিনিল ।বাড়ির সবার কথা শুধাইয়া শুভ্র রুপশ্রীকে চৈতালীর কথা জিজ্ঞাসিল। চৈতালীর কথা জিজ্ঞাসিতেই রুপশ্রী ঘর হইতে মাস খানেক আগের একখানা পত্র বাহির করিয়া দিয়া আবেগপ্লুত কন্ঠে বলিল, এই যে চৈতালী সে বড় সুখি হইয়াছে। শুভ্র পত্রখানা হাতে লইয়া খামের উপর ঠিকানা দেখিল তালুকদার মহাশয় বরাবরে লেখা সে পত্র খুলিয়া পড়িল।

হইতে টরেন্টো

তারিখ:৩০/১১/৮৯ইং

শ্রীচরণকমলেষু

বাবা, সর্বপ্রথম আমার শতকোটি প্রণাম গ্রহণ করিবেন। পর সমাচার এই যে আমি পৃথিবীতে এতই অভাগা যে অতীব মূল্যবান ধন হাতে পাইয়াও সেই ধন রক্ষা করিতে পারিলাম না। এখানে আসার পর থেকে আমাদের কাহারো শরীর ভালো যাইতে ছিলনা বিশেষ করিয়া আপনার কন্যার শরীর বেশি ভাঙ্গিয়া গিয়াছিল বহু স্থান ঘুরিয়া হাওয়া পরিবর্তন করিয়াও তাহার শরীর ঠিক রহিল না। বহু চেষ্টা করিয়াও তাহার ভাঙ্গা শরীর জোড়া লাগাইতে পারিলাম না শেষে ভাঙা দেহখানা লইয়া আপনার কন্যা চৈতালী গত ২৬/১১/৮৯ইং তারিখে স্বর্গবাসী হইয়াছে। মৃত্যুকালে সে শুধু শুভ্র শুভ্র বলিয়া দুইবার ডাকিয়াছে। মায়াময় এই পৃথিবীতে প্রিয় মা বাবা ছাড়াও এত এত আত্মীয় থাকিতে চৈতালী কেন শুভ্রের নাম ডাকিল এই কথা ভাবিতেই বিধাতা আমাকে অল্প সময় দিয়াই আমার ভাবনার ফল দিয়া দিলেন। আমি ভাবিয়া তাহার কারণ পাইলাম নিজের অতি প্রিয় বন্ধু আত্মার আত্মীয় শুভ্রের সহিত দেখা হইলে কি বলিব বড় লজ্জা পাইব বিধায় আমি হতভাগা আর দেশে ফিরিব না।

ইতি,

আপনার ছোট জামাতা

তনয় কুমার তালুকদার।

পত্র পড়িয়া শুভ্র দেখিল রুপশ্রী জোরে ফোঁপাইয়া কাঁদিতেছে ক্ষীণ প্রদীপটার দিকে তাকাইয়া শুভ্র ঠাঁই পাইল না ওই আলো বড় ক্ষীণ, তাহাই সম্মুখে খোলা আকাশের দিকে চাহিয়া দেখিল গত হইয়া যাওয়া পূর্ণিমার চাঁদ উদিত হইতেছে। একদিন পুকুরে দেখা চন্দ্রমুখ ওই আকাশে উদীয়মান চন্দ্রের সহিত মিল পাইয়া শুভ্র সেই দিকেই অগ্রসর হইল।

 


Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)