অশ্লীলতা - ছোট্ট একটু ব্যবচ্ছেদ ❑ পর্ব - ১

0


অশ্লীলতা - ছোট্ট একটু ব্যবচ্ছেদ

পর্ব - ১

চুতমারানি চাঁদ হালায় ঐ মাইয়ার পায়ের মধ্যে ঢুকে বাড়াবের পারতাছে না'

লেখাটি আমার নয়, বাংলা সাহিত্যে অনন্য প্রতিভার শক্তিশালী গদ্য লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের একটি উপন্যাস থেকে নেয়া। একে কি অশ্লীলতা বলা যাবে!

আমি বলব, কোনোভাবেই না। কারণ এটা খুব সাধারণ, স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যবহার করা মানুষের মুখের ভাষা হিসেবেই ব্যবহরিত হয়েছে। এই লাইনে লেখক যদি মানুষের মুখের ভাষা ব্যবহার না করে, কৃত্তিমভাবে লেখার জন্যই শুধু অশ্লীল শব্দ লিখতেন, তবে সেটা শ্লীলতায় বেঁধে রাখা যায় কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকতেই পারে।

আমরা কি খানিকটা সাহসী হতে পারি! নিজের জন্য না, সমাজের জন্য। সমাজ কি এখনো লেখক কবিদের ভাষা বোঝার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছে! যে সমাজে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া অপরাধ, তার সাহিত্যের ভাষা রক্ষনশীল না হয়ে উপায় থাকে! আমি কখনো গোঁড়ামির সমর্থক নই। শিল্পের নামে যাচ্ছেতাই উগড়ানোও আমি সমর্থন করি না।

আমরা যারা সাহিত্যের চর্চা করি, সেটা কি তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। মোটা দাগে যদি বলি, গণমানুষের নিত্যকার জীবনাচরণ, কথ্য জীবনের ছোট ছোট অংশগুলোই সাহিত্য। সাহিত্য রচিত হতে পারে বাস্তবতার নিরিখে অথবা কল্পনার রং তুলির মাধ্যেম। গণমুখী না হলে সে সাহিত্য আমার কাছে মূল্যহীন, সে আমি বাস্তবতা থেকে লিখি অথবা কল্পনার ক্যানভাসে। গণমুখী সাহিত্য রচনার প্রধান বিষয়ই ভাষা। মুখের ভাষাকে কলমে না আনতে।পারলে সেটা গণমুখী হয় না।

কবি সাহিত্যিককে গণমুখী সাহিত্য চর্চা করার জন্য মানুষের মুখের ভাষাকে জানতে হবে। আমাদের চারপাশে যে ভাষা, যে বাক্য, যে শব্দগুলো স্বতস্ফূর্তভাবে মানুষ ব্যবহার করে, কবি লেখকের কলমে তা উঠে আসলে কোনোভাবে তাতে অশ্লীলতার তকমা লাগানো যায় না। কিন্তু মুশকিল হলো এ সময়ে আমরা যারা সাহিত্য চর্চা করি তারা শ্লীলতা আর অশ্লীলতাকে গুলিয়ে ফেলি। বস্তিতে বাস করা একজন মহিলা অথবা গুলশান ক্লাবে মদ পান করে বাড়ী ফেরা মহিলার মুখের যে ভাষা সেটাকে কি অশ্লীল বলা যায়! যখন কেউ সচেতনভাবেই কামকে জাগ্রত করার উদ্দেশ্যে থেকে কোনো শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করে সেটা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে।

মিথ্যার বিপরীতে সত্যের জয়গানই কবি লেখকদের মূল লক্ষ্য। তাদের ভাব, ভাষা ও ছন্দের যে নান্দনিকতা, তা শ্লীল বা অশ্লীল কিনা সেটি বিচার না করে বিচার করতে হবে, তা সত্য সুন্দর ও সভ্য, জগৎ বিনির্মাণের হাতিয়ার কিনা। এই একটি মাত্র ভাবনাতেই পাঠক এবং লেখককে এসে মিলতে হবে। সাহিত্য রচনায় এর কোনো ব্যতিক্রম ঘটানোর সুযোগ নেই।

মেহেদী হাসান তামিম


Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)