স্বপ্নের সুন্দর বন

0



স্বপ্নের সুন্দর বন

গোপাল বিশ্বাস

বরিশাল থেকে বড় ট্রলার যোগে আমরা আট বন্ধু মিলে

সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। সাথে দু'দিনের খাবার, সুপেয় জল সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী। গল্প গুজবে

প্রায় কখন যে সাড়েতিনটে বেজে গেল টেরই পাইনি। প্রায়ই সুন্দরবনের কাছে পৌঁছে গিয়েছি। দূর থেকে সুন্দর বনের সৌন্দর্য অবলোকন করছি। হীরণপয়েন্ট পেরিয়ে সামনে গিয়ে একদল চিতল হরিণ চোখে পড়ল।

সঙ্গে থাকা দূরবীণ দিয়ে চমৎকার ভাবে এদের চালচলন গতিবিধি দেখলাম। ভীষণ ভালো লাগলো। ট্রলারের শব্দ পেয়ে গভীর গোলপাতার আড়ালে নিমিষেই চলে গেল। আমাদের ট্রলার মধ্যম গতিতে এগিয়ে চলল। একটু পরেই আমরা সুন্দর বনের প্রবেশপথ করমজল খালের গোড়ায় এসে পৌঁছনোর পর বনে প্রবেশ করার অনুমতি নিয়ে বনপ্রহরী রবিউলকে নিয়ে কাঠের রাস্তা ধরে সামনের দিকে এগুচ্ছি।

কাঠের রাস্তা পেরিয়েই রিচার্জ বানর নামে কয়েক ডজন

বানরের তুমুল ঝগড়া দেখলাম। আক্রমণ করে বসতে পারে তাই ভেংচি দিলাম না। একটাই শখ পৃথিবীর সবচেয়ে হিংস্র সুন্দর প্রাণীটির একটু দেখা পাওয়া।

প্রহরী বরিউল বলল, সুন্দরবনের বাঘেরা নাকি পিছন থেকে আক্রমণ করে। কারণ; মানুষের চোখে আর এদের চোখের মিলন ঘটলে এরা এমনিতেই সরে যায়। এইজন্য সবাইকে উল্টো করে মানুষের আকৃতির মুখোশ পড়িয়ে

দিয়েছে। যেনো বাঘ বুঝেতে পারে মুখোশের দিক তার দিকে চেয়ে আছে।

একটি খাল পেরিয়ে আমরা প্রায়ই সাগরের কোলে এসে পড়েছি। হঠাৎ প্রায় আটফুট লম্বা একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার রাজকীয় ভঙ্গিতে হেলেদুলে খাল পেরুচ্ছে।

আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই সুন্দর মুহূর্তটি ফ্রেম বন্দি করে রেখেছি। কেউ আবার ভিডিও করার ্যস্ত হয়ে পড়েছে।

খাল পেরিয়েই যখন গোলপাতার চরে উঠে যাচ্ছে ঠিক তখনই ওর সুন্দর দু'টি বাচ্চা পরম মমতায় মায়ের মুখের সামনে দৌড়ে এসে একবার মুখে, লেজে,পিঠে

ওঠে স্নেহের বাৎসল্যতা প্রকাশ করছে। মনে মনে ভাবলাম, সুন্দর বন ঘুরার সার্থকতাটা বুঝি এখানেই পরম পাওয়া।

রবিউল বলল, এই সুন্দর বনে প্রায় লক্ষাধিক বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ রয়েছে। তারমধ্যে চিতল হরিণের সংখ্যাই বেশি। এছাড়াও বনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট খাল নদীতে প্রায় দুইহাজারেরও বেশি কুমির রয়েছে। রয়েছে কিছু পাইথন, বন্য শুকুর, নীল মাছরাঙা, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, ধূসর মাথা ঈগল, করাত মাছ,

এক প্রজাতির ডলফিন ইত্যাদি।

চিতা বাঘ,শিং বিহীন জাভাগন্ডার, ডোডো পাখি, শকুণ

ইত্যাদি প্রাণী অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

প্রায়ই সন্ধ্যা নেমে আসলো। আমরা খুব সাবধানে সাগরের কোল ঘেঁষে হাঁটছি। এরই মধ্যে একদল মৌয়ালদের সাথে দেখা হলো। খুব বিনয়ের সহিত আমাদেরকে কোকের দু' লিটার সদ্য আহরিত টাটকা মধু খেতে দিল। ওদের মুখে ওদের খুব ঝুকিপূর্ণ মধু আহরণের কথা শুনে চমকে গিয়েছি। ভাবলাম, ক্ষুধার জালা মেঠাতে মানুষকে কত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয়!

একটু পরেই দিগন্ত রেখায় ডুবন্ত কুসুম রঙের সূর্যের চমৎকার অস্ত যাওয়ার দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল।যা চিরদিন হৃদয়ে অমর স্মৃতি গাঁথা হয়ে থাকবে। রাতে দ্রুত সুন্দর একটি কটেজে ফিরে এলাম। সারারাত নিশি জাগরিত পাখপাখালির ছোটখাট

আওয়াজের মাঝেই ঘুমিয়ে পরলাম।

ভোর হতে নাহতেই রবিউলের ডাকে হুড়মুড় করে সবাই ওঠে ট্রলারে চাপলাম। করমজা খাল পেরিয়েই ট্রলার দাঁড়িয়ে গেলো। এক অপূর্ব চমক দিয়ে পূব আকাশের বুক চিড়ে বিশাল সূর্যের জন্মের আবির্ভাব দেখলাম। যা আমার জীবনের সেরা নৈসর্গিক দৃশ্য। (সংক্ষেপিত)

Gopal Biswas

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)