মায়াবিনী
পপি প্রামানিক
অনেক অনেক দিন আগের কথা। লতিকা সেন নামক এক দিদি কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়তেন। তিনি অনেক লম্বা এবং দেখতে অনেক সুন্দরী ছিলেন। তিনি মহিলা হোষ্টেলে থাকতেন। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তাই পড়াশোনার চাপ একটু বেশিই ছিল। উনি একটু বাচালতাও করতেন।আর ছিলেন ভীষণ সাহসী।
রাতেরবেলা অনেক রাত অবধি পড়াশোনা করতেন।
কিন্তু উনার একটা বদ অভ্যাস ছিল। যত রাত অবধিই পড়াশোনা করুক না কেন জানালা খোলা রাখতেন। তাঁর নাকি দম বন্ধ হয়ে আসে। রুমমেটরা বেশ জোরাজোরি
করতেন। কিন্তু কিছুতেই কাজ হয়নি। রুমের অন্য সবার থেকে উনিই বেশি রাত অবধি পড়াশোনা করতেন। তাই শেষ পর্যন্ত আর কেউ কিছু বলেনি।
কুষ্টিয়া মহিলা কলেজের হোষ্টেল থেকে অনেক আগে কেন্দ্রীয় গোরস্থান দেখা যেত। সভ্যতার বিবর্তনে এখন আর দেখা যায় না।আর লতিকা সেনের জানালা থেকে হুবহু দেখা যেতো। মাস পাঁচেক হোষ্টেল জীবন অতিবাহিত হবার পর একদিন রাত ঠিক দুটো বাজে।
উনি গোরস্তানের উপর দেখতে পান অন্তত বিশ ফুট লম্বা সাদা পোশাক পরিহিত কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু মুখটা অস্পষ্ট। একটু গা ছমছম ভাব হয়। তাই কাউকে কিছু না বলে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন সবার কাছে গল্প করে। সাবাই ভয় পায় কিন্তু লতিকা সেন ভয় পায়নি।
যথারীতি তিনি স্বাভাবিক জীবন - যাপন করতে থাকেন। হঠাৎ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। তারপরও লতিকা সেন ভয় পায়নি এবং জানালা খুলেই পড়াশোনা করতেন।
একদিন অমাবস্যা রাত।সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। লতিকা সেন জানালা খুলেই পড়াশোনা করছেন। হঠাৎ গোরস্তানে সেই লম্বা ভুত।লতিকা ভুতের দিকেই তাকিয়ে আছেন। যেন মায়ায় পরেছেন। এ যেন এক মায়াবিনী ভুত। দেখতে ভীষণ ভালো লাগছে। এভাবে অনেকটা সময় পেরিয়েছে গেছে। সেই ভুত আস্তে আস্তে উনার দিকেই হাত বাড়াচ্ছে। হাতটা এবার লতিকা সেনের গলা স্পর্শ করলো..........
পরদিন সকালে লতিকা সেন রুমে নেই। তাকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর হোষ্টেলের ছাদে পাওয়া গেলো। কিন্তু উনার যখন জ্ঞান ফিরলো উনি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের বেডে শুয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন।

