প্রাথমিকের শিক্ষিকা সূধা আমি
মমতা পাল
পুবের আকাশ হয়নি ফর্সা ঘড়িতে বাজে পাঁচ
তড়িঘড়ি করে উঠে পড়ে সূধা রয়েছে অনেক কাজ।
প্রার্থনা সেরে রান্না চাপায় শ্বাশুড়ির লাগি চা
শ্বশুর মশাই কঠিন অসুখে বিছানায় থাকে গা।
খুব সকালে বের হয় স্বামী মাইল বিশেক দূরে
কোর্টের চাকরি সময় তো নেই কখন আসে যে ফিরে।
ছেলের বয়স বছর খানেক মা ছাড়া থাকে ঘরে
স্নানটি সেরে নাকে মুখে গুঁজে স্কুলের পথ ধরে।
যাওয়ার সময় মনটা তার কেমন যেন করে!
স্নেহের ঐ বাঁধন তাকে দূর্বল
করে তোলে।
বার বার মোছে চোখদুটো তার কিছু তো করার নাই
সংসারের শত অভাব ঘোচাতে চাকরি করা যে চাই।
স্কুল তার অজপাড়াগাঁয়ে চলেনা সেখানে গাড়ি
হাঁটতে হাঁটতে পা দুটো তার হয়ে যায় যেন ভারী।
নয়টা বাজতে এক মিনিট ঘড়িতে তখনও বাকি
চোখে মুখে তার ফুটে ওঠে যেন তৃপ্তির এক হাসি।
সোয়া নয়টায় ক্লাস শুরু সোয়া চারটায় শেষ
টিফিনের বেলা আধা ঘন্টা চোখের পলকে শেষ।
মোবাইল ভিজিট হোম ভিজিট পাঠটিকা কত শত
আরও যে কত ফাইলে ফাইলে দিন কাটে শতশত।
দপ্তরী নেই ক্লার্ক ও নেই ঝাড়ু দেয় নিজ হাতে
এত কষ্টের পরেও তার মুখে হাসি লেগে থাকে।
স্লিপের কাজ, রুটিন মেইন টেইন্স,বিল্ডিং মেরামত
ভোটের তালিকা,শিশু জরিপ হৃদয় করে যে ক্ষত।
একটা নয়, দুটো নয়, ক্লাস তার এগারো
শ্বাশুড়ি বলে, "বৌমা তুমি এত কিছু পারো"।
সূধা হাসে শুধু বুক তার ফাটে বলার তো নেই কিছু
সংগ্রামী তার জীবন বলেই কষ্ট যে তার পিছু।
শিশুদের সাথে পরম মমতায় কাটে তার সারাবেলা
সব সয়ে সয়ে নিজেকে পোড়ায়ে ফিরে আসে সাঁঝবেলা।
ক্লান্ত দেহে বাড়ি ফিরে এসে শিশুটির মুখ দেখে
সারাদিনের কষ্টগুলো গোপনে লুকিয়ে রাখে।
সব কাজ শেষে ঘুমাতে ঘুমাতে রাত্রি বারোটা বাজে
নিদ্রাদেবির কোলেতে বুঝি সুখের ঘন্টা বাজে।
সবাইকে সুখি করে সূধা নিজেকে পুড়ায়ে শেষ
কেউতো ভাবেনা সূধাকে নিয়ে জীবন চলে যে বেশ।
এভাবেই চলে সূধার জীবন
বছর শেষে দিন
কত আর বলো সয়ে যাবে সূধা কেউতো শোধে না ঋণ।

