আমি সেই ফুলবানু ❑ মমতা পাল

0

আমি সেই ফুলবানু মমতা পাল

আমি সেই ফুলবানু যাকে তোমরা নিষিদ্ধ পল্লীর নিষিদ্ধ মেয়ে বলে জানো। যাকে তোমরা প্রতিদিন সকাল বিকাল দেখো একটু রহস্যময় হাসিতে। একটু রং তামাসা করো, একটু কৌতূহলী চোখে তাকাও একটু খোঁচা দাও। হয়তোবা আরও নতুন কিছু দেখার অপেক্ষাও করো কিংবা বলারও--- প্রতিনিয়ত আলো আঁধারির অলিতে গলিতে খদ্দের ধরায় ব্যস্ত সে। তাকে যে বাঁচতে হবে বাঁচাতে ও-- তাইত জীবিকার প্রয়োজনে নয় শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে নিজেকে ওর হয়তোবা এমনভাবে বিকিয়ে দেওয়া। যার প্রতিদিনের দেহ বিক্রির টাকায় কোন মতে চলে তার সংসার বাবার ওষুধ বোনের বিয়ে ভাইয়ের লেখাপড়া অথচ দিনশেষে তার জন্য অপেক্ষা করে শুধুই ঘৃণা আর অপবাদ। তোমরা যাকে হয়ত দিনের আলোয় ঘৃণা কর,থু থু ছিটাও--- নষ্ট মেয়ে বলে গালাগাল করো---- প্রতিনিয়ত এড়িয়ে চলো---- হয়তোবা মৃত্যুর প্রহরও গোনো---+ অথচ রাতের বেলায় তার কাছে ছুটে যাও একটু সুখের আশে, একটু ভালো থাকার নিমিত্তে, হাজারও কষ্ট ভুলে যেতে। অথচ তার দু'চোখে কেবলই এঁকে দাও ঝুটো স্বপ্নের কাজল। তার গালে রং মাখা নাকে নোলক হাতে রেশমি চুড়ি গায়ে সস্তা আতরের ম্যাড়মেড়ে গন্ধ ঠোঁটে এবড়োথেবড়ো লিপিস্টিক পাতলা ফিনফিনে কাপড়ে যার নগ্ন দেহের চমক। যার ছায়া মাড়ানো তোমাদের ধর্মে হয়তবা নিষিদ্ধ। প্রেম নয় ভালোবাসা নয় শুধু যৌবনের এক উন্মত্ত নেশায় পরিপূর্ণ ফুলবানুদের ঘর যেখানে কূপির হাল্কা আলোতে তোমাদের কামার্ত শরীর খুঁজে ফেরে ভিন্ন এক ফুলবানুদের---- যাদের নিজস্ব কোন সংসার নেই ঘর নেই সন্তান নেই শুধু প্রতিদিন নতুন এক অচেনা মানুষকে নিয়ে তার মিথ্যে হাসি মিথ্যে খেলা মিথ্যে বাসর গড়া। অথচ কেউ জানেনা ফুলবানুদের একান্ত কষ্টের কথা! কেউ জানেনা ফুলবানুদের গহীন মনের খবর! কেউ বুঝতেও চায়না তার হাসির আড়ালে লুকানো অশ্রুবিলাপ! তার মাতৃত্বের হাহাকার! তার হেরে যাওয়া ক্ষয়ে যাওয়া গল্পের কথা! ভালো আছি ভালো থাকার এই মিথ্যা অভিনয়ে আজ সে ক্লান্ত,পরিশ্রান্ত। কিন্তু ফুলবানুরা হারতে চায়না--- তাদের যে হারতে নেই---- যদিও সে জানে তার স্বপ্ন দেখতে নেই--- তার স্বপ্ন দেখাতেও নেই--- তবুও তার দোলাচল চিত্তে ক্ষীণ আশার আলোই তাকে বাঁচিয়ে রাখে। তাকে আবারও স্বপ্ন দেখায়-- সে জানে কোন না কোনদিন সে ফিরে পাবে তার সম্মান তার ন্যায্য অধিকার প্রতীক্ষার প্রহর শেষে ফুলবানুরা জিতবেই--- তাদের যে হারলে চলবেনা--- তারা জানে কোন একদিন কোন একরাজার কুমার পঙ্খি রাজ ঘোড়ায় চড়ে আসবেই--- চারিদিকে আলোর রোশনাই*-- ফুলবানুদের সাজানো ঘরে টকটকে লাল গোলাপের সুগন্ধি হাতে মেহেদি লাল বেনারসি রজনীগন্ধায় বাসর সাজানো নিকানো উঠোনে শিশুর হামাগুড়ি এক চিলতে সোনালি আকাশে স্বপ্নের সহবাস। এই বুঝি ফুলবানুরা এলো--- হাতে বিজয়ের টকটকে লাল সবুজের নিশান। মুছে গেছে সব অশ্রুজল---- ভুলে গেছে দুঃসহ রাতের সেই স্মৃতি--- সেই নষ্ট ভ্রুণ--- সেই অপমানের যন্ত্রণা --- নতুন সূর্যের লাল আভায় ফুলবানুদের মুখে আবারও স্মিত হাসি, আবারও বেঁচে থাকার প্রেরণা আবারও নতুন কোন স্বীকৃতি হয়তোবা নতুনভাবে,নতুন রূপে।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)