ছায়া ভুত
মুহম্মদ রমজান আলী
1991 সাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংঘাতমূলক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ চারমাস বন্ধের পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হয়। আমি হবিবর রহমান হলে। এই চারমাসে আমাদের হলে বেশ কিছু অঘটন ঘটে যায়। একটি ঘটনা হলের আবাসিক বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি আয়েশ ভাইয়ের ঘটনা উল্লেখ করার মতো। একদিন আমাদের ব্লকে অর্থাৎ 261-270 নং ব্লকে বৈদ্যুতিক মেরামত কালে দেখতে পান বিশাল আকৃতির এক কুকুর হা করে তার দিকে এগিয়ে আসছে বাথরুমের ভেতর থেকে। তা দেখেই তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।পরে তিনি নিজেকে আবিষ্কার করেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।নিচতলায় মালীরা কাজ করছিলেন ফুলবাগানে।হঠাৎ দেখতে পান আয়েশ ভাই তাদের সামনে দ্বিতল ব্লক থেকে পড়ে যান।ফলে তার একহাত এক পা ভেঙে যায়। আমরা যখন হলে গিয়ে তার দুর্ঘটনার কথা শুনতে পেলাম তার বাসা বুধপাড়ায় দেখতে গেলাম।তখন তিনি মোটামুটি সুস্থ। এখন উনার প্রশ্ন এতো কুকুর জীবনেও দেখেন নি। বড় একটা উটের সমান নাকি ছিল! আর একবুক উঁচু রেলিং না ভেঙে কেমনে নিচে পড়ে গেলেন তা তিনি বুঝতে পারিছেন না। যাই হোক ঘটনা চাঊর হয়ে গেলো হবিবর রহমান হলে ভুত/পেত্নী জাতীয় কিছু আছে। কেউ বিশ্বাস করলো কেউবা করলো না ফুঁদিয়ে উড়িয়ে দিলো আজগুবি গল্প বলে। আসল ঘটনায় আসি। দীর্ঘদিন বন্ধের বর এসাইনমেন্ট / পরীক্ষা নিয়ে সবাই পড়ালেখায় ব্যস্ত। কেউ কেউ দুইটা আড়াইটা পর্যন্ত রাত জেগে পড়ছে। সেরাতে 261-270 নং ব্লকের একজন স্টুডেন্ট প্রসাব করার জন্য ওয়াশরুমে গেছেন।রাত দুইটা মতো হবে। প্রসাব করার সময় খেয়াল করলেন কোথায় যেন খড়খড় আওয়াজ হচ্ছে। সংগে সংগে উনার আয়েশ ভাইয়ের কথা মনে হয়ে গা শিউড়ে উঠেছে। কোনদিকে খেয়াল নেই উনার। যত তাড়াতাড়ি পারে চেষ্টা করছে কাজ সারতে।
বিধিবাম! ইতোমধ্যেই আরেকজন স্টুডেন্ট ভয়ে ভয়ে যাচ্ছেন একই কাজ সারার জন্যে ওয়াশরুমে।
যেইনা ওয়াশরুমের দরজায় দাড়িয়েছে বিপরীত দিকে লাইট থাকায় প্রথম যে ছাত্র প্রসাব করছেন তার সামনে যেয়ে দ্বিতীয় ছাত্রের ছায়া পড়েছে। এমনিতে সে ভীত অবস্থায় আছে তারপর আবছা ছায়া দেখে বিকট চিৎকার করে পিছন ফিরেই দেখে কি যেন দাড়িয়ে আছে। ওকে ধরেই চিৎকার।দ্বিতীয়জনও চিৎকার।
দুজনেই গলাগলি ধরে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর গোঁ গোঁ করছে। তাদের চিৎকারে আমরা যেয়ে তাদের উদ্ধার করি।হুশ ফিরলে তাদের কথা শুনে আমরা হাসবো না কাঁদবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ঐ খড়খড় শব্দ সেটার তথ্য উদ্ধার করতে যেয়ে দেখি টয়লেটে টিস্যু পেপার রাখার পাত্রে শালার এক চিকের বাচ্চা ঢুকে আর বের হতে পাচ্ছিল না।সে দৌড়াদৌড়ি করছিলো আর খড়খড় শব্দ হচ্ছিল।
আজও এঘটনা মনে হলে একা একাই হাসি।
সে ছেলেটা আজ কোন এক থানার ওসি।
ভালো লাগলে হাসবেন না কাঁদবেন বলে যাইয়েন কিন্তু!

