পরীর মেয়ে পাপ্পু পারেছা _মুহম্মদ রমজান আলী

0



পরীর মেয়ে পাপ্পু পারেছা।

......... ……...

মুহম্মদ রমজান আলী

পাপ্পু পারেছা জমজ দুই বোন। মা, বাবা, দাদা,দাদী নিয়ে ওদের সংসার। অল্প কিছুদিন হলো পাইকরতলীর বড় পাইকড় গাছটা ঝড়ে ভেংগে যাওয়ায় ওরা গৃহহীন হয়ে পরে। শেষে এই পাইকপাড়া বট গাছটায় আশ্রয় নিয়েছে। আগে থেকেই ওদের আত্মীয়রা এগাছে আছে। সে সুবাদেই ওরা এখানে এসেছে।

পাপ্পু পারেছা দেখে প্রতিদিন গ্রামের মানুষের বাচ্চাগুলো স্কুলে যায়। পড়ালেখা করে। একসাথে খেলাধুলা করে। কত আনন্দ ফুর্তি করে। ওদের সারাক্ষণ গাছে বসে থাকতে ভালো লাগে না। তাই মায়ের সাথে জেদ ধরে স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্যে। মা ওদের জেদ সহ্য করতে না পেরে তার শাশুড়ি কে বলে পাপ্পু পারেছা কে স্কুলে ভর্তি করা যায় কিনা? পাপ্পুর দাদী সায় দিয়ে বলে বেশ ভালো কথা। আমরা কত কষ্ট করছি লেখাপড়া না শিখে। এখন নাত্নীরা পড়ালেখা করে বড় বড় চাকুরী করবে আমাদের আর দু:খ রইবে। তাহলে আমরা আমাদের দেশে ক্রোকোপ শহরে পানির নীচে বিশাল বাড়ি করতে পারব।

পরিচয় গোপন করে মানুষের আকৃতি ধরে ওরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। পড়ালেখায় ওরা খুবই ভালো। সবার সাথে খুব খাতির। সকল শিক্ষক ওদের খুবই ভালোবাসেন। ওদের সাথে পড়তো মুক্তা নামে একটা মেয়ে। মুক্তার সাথে ওদের খুবই ভাব। মুক্তা ওদের নিয়ে বাড়িতে যায়। খাবার খাইতে দেয়। মুক্তাও একদিন ওদের বাড়িতে যাবে বলে জেদ করে। উপায় না দেখে মুক্তাকে ওরা অজ্ঞান করে ওদের বাড়িতে নিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে দেয়। ওদের বাড়িঘর দেখে মুক্তা খুব খুশি হয়। খুব সুন্দর পরিপাটি বাড়ি ওদের। ওদের সাথে খেলাধুলা করতে করতে কখন যে রাত হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি কেউই।

এদিকে মুক্তার বাবা মা খোঁজাখুঁজি করে মুক্তাকে না পেয়ে মাইকিং শুরু করে। পারেছা মুক্তার হারানো বিজ্ঞপ্তি শুনে দৌড়ে মাকে গিয়ে বলে। মা বললেন চিন্তা করিস না আমি দেখছি। পারেছার মা তখন মানুষের রুপ ধরে মুক্তার বাবাকে ফোন দিয়ে বলে ভাই আপনার মেয়ে আমাদের বাড়িতে আছে পাপ্পু পারেছার সাথে। চিন্তা করবেন না আগামীকাল ওদের সাথে স্কুলে যাবে। আজকে রাত টা এখানে থেকে যাক মুক্তা।

পরের পাপ্পু পারেছার সাথে আরও কয়েকজন পরীর মেয়ে স্কুলে এসেছে।মুক্তাও ওদের সাথে। প্রধান শিক্ষক দেখলেন পাপ্পু খুবই সুন্দর কয়েকজন বাচ্চা স্কুলে এনেছে। স্কুলের সবাই বলছে কেউ কোনদিন ওদের দেখেনি। প্রধান দেখলেন হঠাৎ করেই কেমন নেই নাই হয়ে গেল পাপ্পুর সাথে আসা বাচ্চাগুলো। চমকে উঠলেন প্রধান শিক্ষক।

দুপুরে বেলা টিফিন পিরিয়ডে পাপ্পু পারেছা মুক্তা আর শিক্ষার্থীরা ক্রিকেট বল নিক্ষেপ খেলছে। প্রধান শিক্ষক নামাজের অজু করার জন্য টিউবওয়েলের দিকে যাচ্ছেন। হঠাৎ বলটা ছাদের গিয়ে পড়ল। নজর ওদিকে যেতেই দেখলেন পাপ্পু উড়ে গিয়ে বল টা পেরে নিয়ে আসল। প্রধান শিক্ষক কয়েকবার চোখ ডললেন। ভুল কিছু দেখলেন নাতো?

ওরা এখন পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

আজকে সমাপনী পরীক্ষার শেষ দিন। এ স্কুলে সমাপনী পরীক্ষার শেষ দিনে সবাইকে নিয়ে রাতে ভোজ হয়।কমিটির সদস্যরাও থাকেন।

সন্ধ্যায় প্রধান শিক্ষক মাগরিব নামাজের অজু করতে যাচ্ছেন। হঠাৎ শো শো শব্দ পেলেন। দেখলেন বন্ধ গেটের উপর দিয়ে কি যেন উড়ে আসলো। চেয়ে দেখেন মাঠের মাঝে পাপ্পু পারেছা দাঁড়িয়ে। অথচ স্কুলে কেউই ছিল না! প্রধান শিক্ষক একটু ভ্রু কোচকালেন। তাকে চিন্তাযুক্ত মনে হলো।

রাত ৯.০০ টা। ভোজ শেষে প্রধান শিক্ষকের নিকট থেকে অশ্রুসিক্ত নয়নে সবাই বিদায় নিয়েছে। প্রধান শিক্ষক বাড়ি যেতে প্রস্তুত হচ্ছেন।

ইতিমধ্যে পাপ্পু ঘরে ঢুকে বলল স্যার আমার মা বাবা আপনার সাথে কথা বলবেন। নিয়ে এসো একথা বলতেই ওর মা বাবা কক্ষে ঢুকে পড়ল। বেশ কথা বলে বিদায় নেয়ার ক্ষনে পাপ্পু মা বলছেন স্যার আর কোনদিন হয়তো আমাদের দেখা হবে না। এখান থেকে আমরা চলে যাচ্ছি। আমার মেয়েদের জন্য দোয়া করবেন।আর যাওয়ার আগে সত্যটা জানিয়ে যাই স্যার। আপনি ভয় পাবেন না। আমরা জ্বীন জাতি। মানুষের রুপ ধরে পাঁচটি বছর আমাদের মেয়েদের কে আপনার নিকট পড়িয়েছি। গা শিউরে উঠল। সামলে নিলাম। ওরা তো আমার ছাত্রী। হোকনা ওরা পরীদের সন্তান।

সালাম দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে দরজা পার হয়ে ওরা উড়ে চলে গেল আমার চোখের সামনে দিয়ে। অনেক দেখা ঘটনার ব্যাখ্যা পেলাম আজ। মনের অজান্তেই চোখের কোনে পানি জমা হয়ে গেল। দপ্তরি রাসেলের ডাকে সন্বিত ফিরে পেলাম। দেখি রাত ১২.৩০। বাইক টা নিয়ে বের হলাম বাড়ির পথে।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)