জীবন বোধ তো এমনই হয় _ হাসনাহেনা রানু

0



জীবন বোধ তো এমনই হয়

একটি দীর্ঘ কবিতা:------

হাসনাহেনা রানু

 

এক ঘড়া বিশুদ্ধ প্রেমে সাত সমুদ্র তের নদী ডুবে গেছে

হাসনাহেনা রানু

সেদিন কৃষ্ণচূড়া স্বপ্ন ঘুম ভেঙ্গে নিঃশব্দ কবাঞ্চ ভোরের ঠোঁটে--

দেখি'নি ঘাস বুকে

এক ফোঁটা শিশির...

অন্তহীন ভোরের নীড় ছেড়ে ভয়ার্ত শীতেরা রোদ

পোহাতে গেছে ,

পৃথিবীর ভূগর্ভে  বেড়ে ওঠা দারুচিনি দ্বীপে...

অভিমানী শিশির জমে গেছে ঘাস ঠোঁটে

চোখে পড়েনি -----

আমি দূর থেকেই অচেনা শহরটাকে দেখেছি

শিশিরের চেয়ে নীরব স্তব্ধ সে তুমি..

সেদিন বিকেলে ধোঁয়া ওঠা মেঘে মেঘে দেখি'নি

দিনের কোন চিহ্ন --

রাত্রির চাঁদের মতো ধোঁয়া ধোঁয়া কুয়াশায় নেমে মেঘ বৃষ্টিরা ঢেকেছিল অচেনা এক স্বপ্নীল শহর :--

প্রকৃতি ছিল বড় বেশি বিষন্ন

সেই শহর আমার ভাল লেগেছিল ,

পোড় খাওয়া বাতাসে তোমার গল্পরা সবুজ উচ্ছ্বাসে জমে উঠেছিল;

আমি দূর থেকে মুগ্ধ চোখে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছি তোমার তুমির ভেতরের অচেনা এক সত্ত্বাকে !

রূপকথার গল্পের চেয়েও সুন্দর মেঘ বৃষ্টি ভালবাসা ,

পৃথিবী সৃষ্টির কাল থেকেই কবিতা ছিল একথা কেউ না জানুক,বা মানুক

তাতে কিছুই আসে যায় না;

সেদিন থেকেই কবিতা নিজের অস্তিত্বের জন্য লড়াই করেছে ..

অনেক যুদ্ধ শেষে কবিতা নিজস্ব একটা স্থান করে নিয়েছে --

সব মানুষের মনের মাঝে কবিতা ঘুমিয়ে আছে।

স্বপ্ন দেখে, কষ্ট পায়.... হাঁটে ,হাসে কাঁদে খেলে

সুখের নায়ে যে একটুও ভাসে না সেটা নয়,

আদিম যুগে কবিতা অদ্ভুত নির্জন পৃথিবীর স্বপ্ন চোখে শুয়েছিল

জানিনা কবে বা কে প্রথম পৃথিবীর চোখ থেকে কবিতাকে জাগিয়েছিল :

সেই তাঁর কাছেই আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ

সেই পৃথিবীর প্রথম কবির চোখে কবিতার জন্য স্বপ্ন ছিল, ভাললাগা ছিল .. ছিল অনন্ত ভালবাসা  ;

সেই প্রথম বার এক সমুদ্র কবিতার চোখে চোখ রেখে

সব দুঃখ, কষ্ট ভুলে

ছোট ছোট ঢেউয়ে সাঁতার কেটেছিল --

সে সব কথা কেউ না জানলেও আমি জানি:

একটা ধান শালিক স্বপ্ন সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কবিতার সৌন্দর্য দেখছিল ...

কাগজের টুকরো হঠাৎ উড়ে গিয়েছিল আকাশে --

সেই থেকে পাখির জম্ম,পাখিরা আকাশে উড়ে ;

একটা ্যাকটাস শতাব্দীর শেষ বিকেলে একটা ফুল ফুটিয়েছে

্যাকটাসের সেকি উচ্ছ্বাস গায়ে মাখামাখি

ফুলের গভীর শূন্যতায় ছিল পৃথিবী!

জীবন কিছুটা কঠিন এবং দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছিল।

কতদিন কত কতক্ষণ হাতে ,আঙুলে কবিতার শব্দ নিয়ে খেলা করেছি ---

কবিতারা স্বপ্ন ঘুমে দারুচিনি দ্বীপ ছুঁয়ে স্বপ্নের অন্তর্গত হতে চাই ,

কখনো কষ্টের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে মায়াজাল ছিঁড়তে চাই !

জানিনা, পৃথিবী সৃষ্টির আগে কবিতারা ঠিক কেমন ছিল ?

স্বপ্নে নাকি সম্পূর্ণ রূপে

স্বপ্নের বাইরে ছিল ...

একদিন আমার একটা ধূসর ডায়েরিতে একটি কবিতা লিখেছিলাম, -- ভালবাসার কবিতা :

কেন জানিনা, কবিতা সেদিন ভীষণ দুঃখ পেল !

কবিতার চোখে একটা বাক্য ছলছল করছিল, ভালবাসা বলে নেই তো কিছুই

ভালবাসা মানেই ফাঁকি --

আমি জানি না,

কবিতা সৃষ্টির আগে রবীঠাকুরের "শেষের কবিতা' " লাবণ্য কেমন ছিল ;

কদম ভালবাসায় কি বৃষ্টির গল্প লেগে আছে সারসের সাদা ডানায় ?

গভীর রাত্রির শিওরে ্যোৎস্নারা হেসে উঠেছিল ,

কোন স্বপ্ন নয় সত্য...

যদিও হাসির শব্দে বৃষ্টির স্রোত বয়ে গেছে অচেনা স্রোতে !

সেদিন মধ্যবর্তী রাতে ঘরের জানালায় দেখি'নি

আকাশে চাঁদ --

মেঘের আচ্ছাদনে ঢেকেছিল এককোটি নক্ষত্র

ওরা এজম্মে চাঁদের বন্ধু হয়েছিল,

আকাশে চাঁদ নেই, নক্ষত্ররা শূন্য প্রায়:

সাদামাটা আকাশটা নীল শূন্য হলে কেমন লাগে

আমার তীক্ষ্ম চোখের কার্নিশে কিছুক্ষণ যন্ত্রণা ধরেছিল ..

বুঝেছিলাম চাঁদ বিহীন পৃথিবী অন্ধ হয়ে গেছে!

আকাশের বিন্ত খসে শূন্য সমুদ্র বুকে 'ফোটা শিশির আছড়ে পড়ে কেঁদে উঠেছিল,

সেই থেকে সমুদ্রের জম্ম....

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একটা পরিচ্ছন্ন কবিতার শহর ঘুমিয়ে আছে আমার স্বপ্ন ঘুমে ---

শহরটা নিঃসঙ্গ রাতের গাঢ় অন্ধকারে তলিয়ে যেতে যেতে আমার হাত আঁকড়ে ধরে ,

একটু তীব্র বাঁচার আকুলতা ঝরে পড়ে শহরের চোখে ..

আমি দেখি সে আকুলতা বৃষ্টি হয়ে ঝরে আমার চোখে !

আমি জানি, শহর কবিতার -- শুধুই কবিতার --

কবিতার শহর আমি ধ্বংস হতে দিতে পারি না

আমি স্বপ্ন ঘুমের অঘোরে হাত শক্ত করে ধরি ---

আহা! জীবন বাঁচানোর কি এক তীব্র প্রচেষ্টা শহরের চোখে মুখে ফুটে ওঠে:

হবে না ?

কবিতা যে প্রাণ !

এই শহরের হলুদ চোখে কবিতার কত কত স্বপ্ন --

মাত্র একুশ বসন্তে কবিতারা স্বপ্ন স্পর্শ করেছিল।

এক রহস্যময় নিঃশব্দ রাত্রির অবগাহনে ডুবে...

আকাশ জুড়ে বৃষ্টি বৃষ্টি মেঘবৃষ্টির খেলা ছিল সারা রাত্রি;

ঝুম বৃষ্টিতে স্বপ্নরা বিবস্ত্র হয়েছিল

তাকে নগ্নতা বলা যাবে না

হয়তো একটু পোশাক বদলানো..

আমি তখন শোকের মিছিলে,মেঘে মেঘে গোলাপ প্রয়াণ  !

কিছু গোলাপ ঝরে পড়েছিল অসময়ে :

গোলাপ কষ্টরা মেঘে মেঘে ছড়িয়ে গেছে এক আকাশে ---

সেই থেকে বৃষ্টির জম্ম!

চাঁদটা নারী আর সূর্য বুঝি পুরুষ হয় আধুনিক কবিতার গদ্য রাজ্যে

এই নারী পুরুষের লিঙ্গ ভেদের বৈষম্য যাবে না কোন কালে ---

আমরা এমনটা কেন ভাবি , বুঝিনা ...

একদিন পৃথিবীর শেষ রাস্তায় তোমার হাত ধরে এলোমেলো হেঁটে বেড়াবো কবিতা -----

একশত এককোটি বছর পর আমি তোমার হাত ছাড়বো ,জেনে নাও :

তার আগে নয়!

এক ক্ষেত সবজির সবুজ চোখে আমি সোনালী দিনের স্বপ্ন রোপন করতে    দেখেছি --

গোপনে গোপনে ওরা কেউ কেউ রোবটের মত সংসার চাই ,

সন্তান সন্ততি চাই --

আহা ! জীবন বোধ তো এমনই হয় ----

এমন হয়ই --- --- ---!

তারিখ   03.05.2021

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)